জীবনের সবচেয়ে সুন্দর সময় বরিশালে কাটিয়েছি: মোশাররফ করিম
- - নিউজ রুম -
- এডিটর --
- 10 November, 2022
নন্দিত অভিনেতা মোশাররফ করিম। তার দর্শকপ্রিয় নাটকের শেষ নেই। সিনেমা অঙ্গনেও করেছেন বাজিমাত। সম্প্রতি অভিনয় ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন তিনি।
‘হুব্বা’ সিনেমা নিয়ে জানতে চাই।
কলকাতার প্রযোজনায় ‘হুব্বা’ সিনেমার শুটিং শেষ করে গত ৫ নভেম্বর দেশে ফিরেছি। হুব্বাতে কুখ্যাত ডনের চরিত্রে দেখা যাবে আমাকে। গল্পের প্রেক্ষাপট হচ্ছে নব্বইয়ের হুগলি জেলার অন্ধকার জগৎ। যেখানকার গ্যাংস্টার হুব্বা। খু ন থেকে শুরু করে সব অপকর্মের মূল হোতা এই গ্যাংস্টার হুব্বা। পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর জামিনে ছাড়া পায়। আমার প্রধান কাজই অভিনয় করা। তার মধ্যে এই সিনেমায় চরিত্রটি ভালো লাগায় কাজ করা। সব কাজের পেছনে প্রত্যাশা থাকে। আগেভাগে কোনো কিছু নিয়ে বেশি বলতে ভালো লাগে না। একটা সম্ভাবনা নিয়েই কাজটা করছি।
বর্তমানে ক্রাইম থ্রিলার, অ্যাকশনধর্মী গল্পে বেশি কাজ হচ্ছে। জীবনমুখী গল্পের কাজ কমে গেছে।
কাজের ক্ষেত্রে বহুমুখিতা প্রয়োজন। শুধু জীবনমুখিতা নয়। শিল্প কোনো বাউন্ডারির মধ্যে না। এটা খুব খোলা একটা ব্যাপার। যখন কমেডি কাজ হচ্ছে, ক্লিক করছে তখন সব শুধু ওর পেছনে দৌড়াতে থাকে। প্রেমের গল্প ভালো হচ্ছে তার পেছনে দৌড়াতে থাকলাম, থ্রিলার হচ্ছে তার পেছনে ছুটতে থাকলাম। এটা ঘটতেই থাকে। তবে একই ধরনের কাজ ক্রমাগত চলতে থাকলে সেটা শিল্পে বন্ধ্যত্ব তৈরি করে।
তবে সে সবের বাইরে যাওয়া অবশ্যই দরকার। বাস্তব জীবনের বাইরে গিয়েও খুব বেশি গল্প হয় না। রূপকথাকে জীবনের বাইরে বলারও কিন্তু জো নাই। কারণ, মানুষের কল্পনায় রূপকথা বাস করে। শিশুর কল্পনায় রূপকথা বাস করে। আর কল্পনার মধ্যে বড় জিনিস হচ্ছে ‘এমন যদি হত’। এই ‘এমন যদি হত’ ভাবনাটা না ভাবতে পারলে ক্রিয়েশন হবে না। বাস্তবতার মধ্যে দৌড়াদৌড়ি করে কল্পনার চর্চা হয় না।
একটু ভিন্ন প্রসঙ্গে আসি। ‘ক্যারাম’ নাটকের পর কোন কাজটি আপনার ক্যারিয়ারে ভূমিকা রেখেছে?
সব মনে নাই। ‘৪২০’, ‘ঘর কুটুম’সহ আরও অনেক কাজ আছে। সিনেমাও আছে। গত দুই-তিন বছরে ভিন্ন স্টাইলের কাজ হচ্ছে। সেসব কাজের মধ্যে সঞ্জয় সমদ্দারের ‘যে শহরে টাকা ওড়ে’, ‘অমানুষ’। এমন বেশ আরও কাজ আছে।
ব্যক্তি মোশাররফ, সেলিব্রিটি মোশাররফকে কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন?
নিজেকে নিজে ব্যাখ্যা করতে তো অনেক সময় লাগবে। অভিনেতা মোশাররফ করিমের মধ্যে ব্যক্তি মোশাররফ করিমও আছে। শিল্পীদের তাই থাকে। যে শিল্পী সত্তা আমার মধ্যে আছে তাকে বাদ দিয়ে তো আমি না! মাঝেমধ্যে নিজেকে আবিষ্কার করি ভিন্নভাবে। যে আমিকে আমি চিনি না। আবিষ্কার করে বিস্মিতও হই। তো ওই খেলাটাকে একসঙ্গে স্পিরিচুয়ালও বলব।
আপনাকে মন্ত্রিত্ব দেওয়া হলে কী পরিবর্তন করবেন?
প্রথম কথা হচ্ছে আমি মন্ত্রিত্ব গ্রহণ করব কি না! মূলত আমি অভিনেতা। আমার কাছে মনে হয় রাজনীতির যে জায়গা সেটাও একটা শিক্ষার জায়গা, চর্চার জায়গা। একজন রাজনীতিবিদ হিসেবেও তৈরির ব্যাপার আছে। যেমন আমি অভিনয় করি, অভিনয়ের ক্ষেত্রেও আমার তৈরি হওয়ার ব্যাপার ছিল। তবে কল্পনায় যদি হয় তাহলে রাস্তাঘাটে দেখা যায় মানুষের চেহারায় ভ্রু কুঁচকে আছে। এই ভ্রুগুলো আমি টান টান করে দিতে চাই।
এমন চাওয়া কেন?
এমন চাওয়াটাই তো হওয়া উচিত। ভ্রু কুচকে আছে তার মানে তো সে টেনশনে আছে। সবার ভ্রুগুলো টান টান থাকত, শান্ত দেখাত।
বরিশালের মোশাররফ করিমকে কতটা মিস করেন?
আমার ছোটবেলাটা ঢাকায় কাটে। পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণি বরিশালে কেটেছে। তারপর আবার ঢাকা। হ্যাঁ বরিশালকে আমি খুব মিস করি। আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর সময় সেখানেই কাটে। প্রথম যখন বরিশালে যাই তখন বছরখানেক বিরক্ত ছিলাম। বিদ্যুৎ ছিল না, অন্ধকারও, কাদা, শীত সব কিছুই বেশি। পরবর্তীতে যখন মিশে গেলাম, তখন উপভোগ করতাম। এখন আমার কাছে মনে হয় জ্যোৎস্না, অমাবস্যা, বর্ষা, হেমন্ত, আকাশের মেঘ, চৈত্রের সেই জমিফাটা রৌদ্র, কুয়াশাগুলো মিস করি। এখন মনে হয় ওই কুয়াশা যদি পেতাম, ওই বৃষ্টিতে যদি ভিজতে পারতাম।