কলকাতায় তুলকালাম, হায়দরাবাদে ভিন্ন রূপ দেখলেন মেসি

আর্জেন্টাইন মহাতারকা লিওনেল মেসির ভারত সফরের শুরুটা হয়েছে চরম অব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে। ‘গোট ট্যুর অব ইন্ডিয়া’র প্রথম দিনে আয়োজকদের ব্যর্থতায় তাকে ঠিকমতো দেখতে না পেয়ে কলকাতার সল্টলেকে হট্টগোল, ক্ষুব্ধ দর্শকরা স্টেডিয়ামের চেয়ার ভাঙচুর ও নানা সম্পদ লুট করার মতো ঘটনা ঘটেছে। এরই মাঝে প্রধান আয়োজক শতদ্রু দত্তকে আটক করে পুলিশ। একইদিন রাতে হায়দরাবাদে সম্পূর্ণ ভিন্ন অভিজ্ঞতা পেলেন মেসি-সুয়ারেজ-ডি পলরা।

কলকাতার যুবভারতী স্টেডিয়ামে এমন বিশৃঙ্খলার পর মেসিরা ভারত সফর সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে পারবেন কি না সেই অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল। প্রথম ধাপ শেষ করে গতকাল (শনিবার) দুপুরেই হায়দরাবাদের উদ্দেশে রওনা দেন ইন্টার মায়ামির তিন তারকা। বিকেল সাড়ে ৫টার পর শহরটিতে পা রেখে মেসিরা রাত ৮টা নাগাদ সেখানকার উপল স্টেডিয়ামে পৌঁছান। স্বাভাবিকভাবেই তাদের সফর ঘিরে হায়দরাবাদে ছিল বাড়তি নিরাপত্তা। বিমানবন্দরে কড়া নিরাপত্তার পর স্টেডিয়ামেও ব্যবস্থাপনা ছিল ঠিকঠাক।

মেসির যখন মাঠে প্রবেশ করছেন, তখন প্রদর্শনী ফুটবল ম্যাচ চলছিল। দুই সতীর্থ লুইস সুয়ারেজ এবং রদ্রিগো ডি পলকে নিয়ে মেসি ভিভিআইপি বক্সে দাঁড়িয়ে সেই ম্যাচ দেখেছেন। কয়েকবার উচ্ছ্বসিতও দেখা যায় বিশ্বকাপজয়ী আর্জেন্টাইন অধিনায়ককে। মেসি স্টেডিয়ামে আসার পরই মাঠে নামেন তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী রেবন্ত রেড্ডি। কয়েক মিনিটের মধ্যে তিনি একটি গোলও করেন। খেলা শেষ হতেই মেসিরা মাঠে যান ‘মেসি–মেসি’ স্লোগানে উত্তাল গ্যালারির অভ্যর্থনা নিতে নিতে। তখন লাতিন ভাষায় গান বাজছিল স্টেডিয়ামে। রেবন্ত রেড্ডি ও বাচ্চাদের সঙ্গে ‘পাসিং দ্য বল’ খেলেছেন মেসিরা।

কলকাতায় মেসিকে একফলক দেখতে দর্শকদের যে তৃষ্ণা ছিল, তা ছিল হায়দরাবাদেও। তবে পার্থক্যটা হচ্ছে– এখানে সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে ফুটবলভক্তদের। মাঝে কয়েকবার তাদের উদ্দেশে শট মেরে বল গ্যালারিতে পাঠিয়েছেন মেসি। হাত নেড়ে মাঠে প্রদক্ষিণও করেছেন সদলবলে। কলকাতায় মেসি মাঠে ঢোকার পর কয়েকশ লোক তাকে ঘিরে ছিলেন। এর মধ্যে রাজনীতিবিদ, চিত্রসাংবাদিক, নিরাপত্তারক্ষী মিলিয়ে সৃষ্ট বেষ্টনীর কারণে তাকে ঠিকঠাক দেখতে পারেননি গ্যালারির দর্শকরা। আর হায়দরাবাদে মেসির আশপাশে যথেষ্ট ফাঁকা জায়গা রাখা হয়। ফলে সেখানে কোনো বিরক্তি নয়, বরং ভক্তদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এলএমটেনও উচ্ছ্বাসে মেতেছেন।

হায়দরাবাদ উপল স্টেডিয়ামে মেসির খুব কাছে ঘেঁষতে দেওয়া হয়নি সাধারণ কাউকে। নির্দিষ্ট দূরত্ব রেখে ছবি তোলার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। মাঠ প্রদক্ষিণ করার পর একটি অস্থায়ী মঞ্চের সামনে নিয়ে যাওয়া হয় তাদের। একপর্যায়ে ডেকে নেওয়া হয় কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীকে। তার সঙ্গে আলাপচারিতায় দেখা গেছে মেসিকে। রাহুল মেসি ও সুয়ারেজের হাতে একটি করে স্মারক তুলে দিয়েছেন। পরবর্তীতে প্রদর্শনী ম্যাচে বিজয়ী দলকে ‘গোট কাপ’ ট্রফি তুলে দেন মেসি।

এমন বিশেষ মুহূর্তে মেসিও নিশ্চয়ই মনের ভাব শোনানোর কথা হায়দরাবাদের ফুটবলভক্তদের। স্প্যানিশ ভাষায় তিনি যা বললেন তার অর্থ দাঁড়ায়– ‘ভারতে আসতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত। আপনাদের ভালবাসায় আমি আপ্লুত। এই ভালবাসার কথা চিরকাল মনে থাকবে। আমাকে আপনাদের অভ্যর্থনার এই ধরন অকল্পনীয়।’ একে একে কথা বলেছেন ডি পল ও সুয়ারেজও। ঘণ্টাখানেক থেকে তারা হায়দরাবাদ স্টেডিয়াম থেকে বেরিয়ে যান। ১৫ ডিসেম্বর সফর শেষ করার আগে মুম্বাই ও দিল্লিতে যাওয়ার কথা রয়েছে মেসিদের।

পাঠকের মন্তব্য