ফের রক্তাক্ত মিয়ানমার, ৩৯ বিক্ষোভকারী নিহত

অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখলের পর রোববারই দেশটিতে সবেচেয় বেশি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এদিন দেশটির বিভিন্ন স্থানে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে প্রাণ গেছে অন্তত ৩৯ জন অভ্যুত্থানবিরোধীর।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ইয়াঙ্গুনের লাইংথাইয়া শিল্প এলাকাতেই নিহত হন ২২ জন। এ ছাড়া বিভিন্ন স্থানে আরও ১৬ জন প্রাণ হারায়।

স্থানীয় গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লাইংথাইয়া শিল্প এলাকায় চীনা অর্থায়নে পরিচালিত কয়েকটি কারখানায় রোববার আগুন দেওয়া হয়। ওই এলাকা ধোয়ায় ঢেকে যেতে শুরু করলে বিক্ষোভকারীদের ওপর চড়াও হয় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে সেখানে ২২ জন নিহত হয়। যদিও কারখানা পোড়ানোর ঘটনায় দায় স্বীকার করেনি কোনো পক্ষ।

ঘটনাস্থলে থাকা এক চিত্রসাংবাদিক বলেন, 'এটা ছিল ভয়াবহ। আমার চোখের সামনে লোকজনকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এটা আমার স্মৃতি থেকে কখনোই মুছে যাবে না।'


এদিকে ঘটনার পর মিয়ানমারে চীনা দূতাবাসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা লাইংথাইয়ায় পোশাক কারখানায় অগ্নিসংযোগ করলে অনেক চীনা কর্মী আহত হয় ও আটকে পড়ে।  এ অবস্থায় চীনা দূতাবাসের পক্ষ থেকে তাদের সম্পদ ও নাগরিকদের রক্ষায় মিয়ানমারের কাছে সহায়তা চাওয়া হয়।

প্রসঙ্গত, চীনকে মিয়ানমারে ক্ষমতা দখলকারী জান্তা সরকারের সহায়ক শক্তি হিসেবেই দেখছে বিক্ষোভকারীরা। এ কারণে অভ্যুত্থানের পর থেকে দানা বেঁধে ওঠা বিক্ষোভে ব্যাপক চীনবিরোধী মনোভাব প্রকাশ পাচ্ছে।

এদিকে মিয়ানমারের রাজনৈতিক বন্দিদের সহায়তায় কাজ করা অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিসনারসের (এএপিপি) পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিভিন্ন স্থানে সহিংসতায় আরও ১৬ জন নিহত হয়েছে, যাদের মধ্যে এক পুলিশ সদস্যও রয়েছে।

সহিংসতার প্রেক্ষাপটে লাইংথাইয়াসহ ইয়াঙ্গুনের অন্য জেলাগুলোতে সামরিক আইন জারি করা হয়েছে বলে দেশটির রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত সংবাদ মাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে।

সেনা নিয়ন্ত্রিত মিয়াবতী টেলিভিশনের খবরে বলা হয়েছে, চারটি পোশাক কারখানা ও একটি সার কারখানায় আগুন দেওয়ার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে হস্তক্ষেপ করে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। এ ছাড়া আগুন দেওয়ার পর প্রায় হাজার দু'য়েক মানুষ ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঘটনাস্থলে যেতে বাধা দেয় বলেও টেলিভিশনটির খবরে দাবি করা হয়।

এ বিষয়ে জান্তা সরকারের একজন মুখপাত্রের কাছে জানতে চাওয়া হলেও তিনি কোনো মন্তব্য করেননি বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

মিয়ানমারের পার্লামেন্টের নির্বাচিত সদস্যদের প্রতিনিধিত্ব করা ডা. সাসা লাইংথাইয়ার জনগণের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছেন। এক বার্তায় তিনি বলেন, মিয়ানমারের জনগণের ওপর হামলাকারী ও শত্রুরা এবং প্রাদেশিক প্রশাসনিক পরিষদ প্রতি ফোটা রক্তের জন্য দায়ী থাকবে।

গত ১ ফেব্রুয়ারি এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মিয়ানমারের নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। এরপর থেকে দেশটিতে চলছে অভ্যু্ত্থানবিরোধী বিক্ষোভ। এএপিপির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, চলমান এই বিক্ষোভে এখন পর্যন্ত ১২৬ জন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া গত শনিবার পর্যন্ত আটক করা হয়েছে ২ হাজার ১৫০ জন।

পাঠকের মন্তব্য