সচিবের মা করোনায় আক্রান্ত, সেবায় সরকারি ২৪ কর্মকর্তা-কর্মচারী! 

করোনা আক্রান্ত হয়ে মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব রওনক মাহমুদের মা জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউটের করোনা ইউনিটে ভর্তি হয়েছেন। আর মায়ের সেবায় নিয়োজিত রয়েছে এক উপসচিবসহ ২৪ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী।

তাদের লিখিত নির্দেশনা দিয়ে তিন দিনের জন্য চার শিফটে দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। যাদের ২৪ ঘণ্টাই থাকতে হচ্ছে হাসপাতালে করোনা ইউনিটে।
সোমবার (২৩ আগস্ট) বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ২৪ এর এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে আসে। তবে এমন কর্মকাণ্ডের কথা বেমালুম অস্বীকার করলেন সচিবের একান্ত সচিব আজিজুল ইসলাম৷ তিনি বলেন, বিষয়টি কেউ উদ্দেশ্য মূলকভাবে করেছে। হাসপাতালে গেলেই বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে।

নির্দেশনায় বলা হয়, এই ২৪ কর্মকর্তা-কর্মচারীর দায়িত্ব সমন্বয় করছেন, সচিবের একান্ত সচিব আজিজুল ইসলাম।
  
সচিবের মায়ের সার্বিক অবস্থা জানাতে হবে পিএসকে, চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ, টেস্ট করানোর ও তা দ্রুত সংগ্রহ করা এবং হোয়াটসঅ্যাপে সচিবের পিএসকে রিপোর্টের কপি পাঠাতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে থাকতে হবে রোগীর কাছাকাছি, রোগীর আত্মীয়দের কাছে জানান দিতে হবে কর্মকর্তাদের উপস্থিতি।

নির্দেশনায় দেখা গেছে, ২৩ আগস্ট সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত মন্ত্রণালয়ের সিস্টেম অ্যানালিস্ট মো. ইলিয়াস হোসেন ও অফিস সহায়ক মো. জাহিদুল ইসলাম, দুপুর ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বাংলাদেশ প্রাণী সম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএলআরআই) ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. আসলামুল আলাম, ট্রেইনি সহকারী মো. সানোয়ার হোসেন, সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের (ডিএলএস) এনিমেল প্রোডাকশন অফিসার আলী রেজা আহমেদ ও ল্যাব টেকনেশিয়ান বিভূ চন্দ, রাত ১২টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত মৎস্য অধিদপ্তরের (ডিওএফ) বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান ও ট্রেইনি সহকারী সানোয়ার হোসেন দায়িত্ব পালন করবেন।  

২৪ আগস্ট সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ডিওএফ এর পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন কর্মকর্তা মো. রাশেদ পাভেজ এবং অফিস সহায়ক মো. নাজির হোসেন পারভেজ, দুপুর ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বিএলআরআই এর ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. আসলামুল আলাম, ট্রেইনি সহকারী মো. সানোয়ার হোসেন, সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত প্রোগ্রামার নূর মোহাম্মদ ও অফিস সহায়ক মো. আব্দুল কাদের, রাত ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ডিএলএস এর বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. ফারুক মিয়া ও ল্যাব টেকনেশিয়ান মো. শহিদ উল্যাহ দায়িত্ব পালন করবেন।  

এভাবে ২৫ আগস্ট সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত উপ-সচিব পুলকেশ মণ্ডল ও ট্রেইনি সহকারী জগদীশ চন্দ্র দাস, দুপুর ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত

বিএলআরআই এর ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. আসলামুল আলাম ও ট্রেইনি সহকারী মো. সানোয়ার হোসেন, সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত ডিওএফ এর পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ণ কর্মকর্তা মো. সামছুল আলম পাটওয়ারী ও অফিস সহায়ক মো. মফিজ হোসেন, রাত ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ডিএলএস এর বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এসএম নিয়াজ মোর্শেদ ও ল্যাব টেকনেশিয়ান জিএম শাহিনুর ইসলাম দায়িত্ব পালন করবেন।

এসব তথ্যের সত্যতা মিললো জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউটের করোনা ইউনিটের সামনে। মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়ের দু’জন স্বীকার করলেন, সচিবের মায়ের যেকোনো দরকারে ছয়ঘণ্টা সেখানে ডিউটি করতে হচ্ছে তাদের।

এ বিষয়ে একাধিকবার মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব রওনক মাহমুদকে ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

পরে এ বিষয়ে সচিবের একান্ত সচিব আজিজুল ইসলাম বলেন, আমাদের সচিব স্যারের মায়ের বয়স ৯৫।  তিনি করোনা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন। সচিব স্যারও অসুস্থ, তিনি ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন এক সপ্তাহ আগে। এখনও পুরোপুরি সুস্থ হয়নি। তাই আমরা মানবতার খাতিরে অনেকেই সচিব স্যারের মাকে দেখতে হাসপাতালে গিয়েছি। সে বিষয়টা জেনে সচিব স্যার আমাদের বলেছেন হাসপাতালে ভিড় করা যাবে না। যদি কেউ দেখতে যান তাহলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিভিন্ন সময়ে যেতে হবে। একসঙ্গে জটলা করে যাওয়া যাবে না।  

তিনি বলেন, মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে এ ধরনের কোনো চিঠি ইস্যু করা হয়নি। যে চিঠিটি গণমাধ্যমে দেখা যাচ্ছে সেখানে কোনো কর্মকর্তার স্বাক্ষর বা স্মারক নাম্বরও নাই। এরকম একটি ভুয়া চিঠির ওপর ভিত্তি করে গণমাধ্যম নিউজ করেছে।  
 

পাঠকের মন্তব্য