বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও পদত্যাগের হিড়িক

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পদত্যাগের হিড়িক পড়েছে। ইতোমধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ ১৬ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। এ দৌঁড়ে পিছিয়ে নেই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি পদত্যাগ করেছেন ইতোমধ্যেই। কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিতাড়িত হয়েছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত ট্রাস্টিরা; যারা এর আগে বিএনপি ও জামায়াতপন্থীদের বিতাড়িত করে প্রতিষ্ঠানগুলোর দখল নিয়েছিলেন।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে সবশেষ ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ (আইইউবি)-এর উপাচার্য অধ্যাপক ড. তানভীর হাসান এবং প্রক্টর অধ্যাপক খসরু মোহাম্মদ সেলিম পদত্যাগ করেছেন। শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন দাবির মুখে তাঁরা পদত্যাগ করতে বাধ্য হন বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দপ্তরের একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।

জানা গেছে, ২০২১ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি আইইউবি’র উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের রুজভেল্ট ইউনিভার্সিটির ফিন্যান্স বিভাগের রলফ এ ওয়েইলের সাবেক অধ্যাপক ড. তানভীর হাসান। দায়িত্ব গ্রহণের ৩ বছর ৬ মাসের মাথায় তাঁকে পদত্যাগ করতে হলো। যদিও উপাচার্য এবং প্রক্টর ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেছেন বলে নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়টির নতুন ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য হিসেবে অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান এবং ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর হিসাবে অধ্যাপক ড.আসাদুজ্জামান নিয়োগ পেয়েছেন।

কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিতাড়িত হয়েছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত ট্রাস্টিরা; যারা এর আগে বিএনপি ও জামায়াতপন্থীদের বিতাড়িত করে প্রতিষ্ঠানগুলোর দখল নিয়েছিলেন। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে সবশেষ ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ (আইইউবি)-এর উপাচার্য অধ্যাপক ড. তানভীর হাসান এবং প্রক্টর অধ্যাপক খসরু মোহাম্মদ সেলিম পদত্যাগ করেছেন। শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন দাবির মুখে তাঁরা পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।

এদিকে ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র আতিকুল ইসলাম ও সদ্য সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাতসহ শিক্ষা মন্ত্রণালয় মনোনীত ট্রাস্টি বোর্ড সদস্যদের ‘বিতাড়িত করে’ মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ‘পুনরুদ্ধার’ করেছেন প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টিরা। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জারি করা এক আদেশে ট্রাস্টি বোর্ডের আগের সদস্যদের বাদ দিয়ে ওই বোর্ড গঠন করা হয়েছিল।

গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে পালিয়ে যাওয়ার পর প্রতিষ্ঠাতারা বিশ্ববিদ্যালয়টির নিয়ন্ত্রণ নেন। তারা সাবেক সচিব মুহাম্মদ ফজলুর রহমানকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান ঘোষণা করেছেন। গত ১০ আগস্ট বোর্ড অব ট্রাস্টিজের প্রতিষ্ঠাতা সদস্যরা ইউনিভার্সিটির শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেন। সভায় আতিক-আরাফাতের ট্রাস্টি বোর্ডকে অবৈধ আখ্যা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ‘অবৈধ দখল মুক্ত’ ঘোষণা করা হয়।

আরেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ও আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণমুক্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ফিরেছেন আগের ট্রাস্টিরা। আওয়ামী লীগ নেতা লিয়াকত শিকদারসহ অন্যরা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। একইভাবে আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম (আইআইইউসি)-এ আওয়ামী লীগ দলীয় সিন্ডিকেট থেকে দখলমুক্ত হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়টির অভিযোগ, ২০২১ সালের মার্চ মাসে সাবেক সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী বেআইনীভাবে চর দখলের মতো জোরপূর্বক আইআইইউসি দখল করে নেয়। সম্প্রতি  আ ন ম শামসুল ইসলামের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়টির নতুন বোর্ড অব ট্রাস্টিজ গঠন হয়েছে।

কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ভিসি ড. গোলাম কিবরিয়া ভূইয়াও পদত্যাগ করেছেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর দেওয়া পদত্যাগ পত্রে তিনি লিখেছেন, পারিবারিক ও ব্যক্তিগত কারণে তিনি গত বুধবার উপাচার্য পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। এ নিয়ে কক্সবাজারে কর্মরত সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান লায়ন মো. মুজিবুর রহমান।

এ সময় তিনি বলেন, উচ্চশিক্ষায় কক্সবাজারকে এগিয়ে নেয়ার স্বপ্ন থেকে কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠা করেছিলাম। ২০২০ সালে একটি অবৈধ দখলবাজ চক্র কক্সবাজারবাসীর এ সম্পদকে লুটেপুটে খাওয়ার মিশনে নামে। আওয়ামী লীগ নেতা সালাহ উদ্দীন আহমদের (মাছ সালাহ উদ্দীন) নেতৃত্বে একটি দখলদার গোষ্ঠী বেআইনিভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃত্ব হাতে নিয়ে শিক্ষার পরিবেশকে ধ্বংস করে দেয়।

তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়কে রাজনৈতিক দলের অফিস বানিয়ে নেয়। যে কারণে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা তাদের প্রাণের ক্যাম্পাস থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হয়। ঠিক এমন দুঃসময়ে দেশের ছাত্র-জনতার স্বত:স্ফূর্ত গণঅভ্যুত্থানে পতন ঘটে আওয়ামী লীগ সরকারের। অবশেষে ভুক্তভোগী শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আহবানে তিনি প্রতিষ্ঠানের হাল ধরেন।

সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে তিনি জানান, দখলদার সালাহউদ্দীন আহমদ, ভিসি ড. গোলাম কিবরিয়া ও আ. ক.ম গিয়াস উদ্দীন মিলে পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ের সুষ্ঠু শিক্ষার পরিবেশ ধ্বংস করার পাশাপাশি দুর্নীতি ও লুটপাটের মহোৎসব চালিয়েছে। যার শ্বেতপত্র শিগগির প্রকাশ করা হবে।

পাঠকের মন্তব্য