ডিজিটাল ডিভাইস অ্যান্ড ইনোভেশন এক্সপো শুরু হচ্ছে ২৯ জানুয়ারি

প্রযুক্তির সাম্প্রতিক উদ্ভাবন, তথ্যপ্রযুক্তিতে দেশের সক্ষমতা, সাফল্য ও সম্ভাবনা দেশ এবং বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরা, উদ্যোক্তা সৃষ্টি ও প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার উদ্দেশ্যে দেশে আবারও অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তি প্রদর্শনী ‘ডিজিটাল ডিভাইস অ্যান্ড ইনোভেশন এক্সপো ২০২৬।

“বাংলাদেশ টু দ্য ওয়ার্ল্ড” প্রতিপাদ্যে বাংলাদেশ চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে আগামী ২৯ জানুয়ারি ২০২৬ শুরু হওয়া তিন দিনব্যাপী এ প্রদর্শনী যৌথভাবে আয়োজন করছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ, বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ এবং বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি (বিসিএস)। আয়োজনটি চলবে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত।

আজ ২৯ ডিসেম্বর (সোমবার) রাজধানীর আগারগাঁওস্থ বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি)-এর অডিটোরিয়ামে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব জনাব শীষ হায়দার চৌধুরী, এনডিসি।

সংবাদ সম্মেলনে পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে প্রদর্শনীর বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন বিসিএস মহাসচিব মুহাম্মদ মনিরুল ইসলাম।

বাংলাদেশ চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রের হল অব ফেম, সেলিব্রেটি, হারমনি, কার্নিভাল, মিল্কিওয়ে, মিডিয়া বাজার, উইন্ডি টাউনসহ বাংলাদেশ চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রের প্রায় ৬ হাজার ৫০০ বর্গমিটার এলাকাজুড়ে এ প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে। আঙ্গিক ভেদে প্রদর্শনীটি কয়েকটি জোনে ভাগ করা হয়েছে। সেগুলো হলো-লোকাল ম্যানুফ্যাকচারার্স, প্রোডাক্ট শোকেস, ইনোভেশন, মিট উইথ ইন্টারন্যাশনাল ম্যানুফ্যাকচারার্স, ডিজিটাল লাইফস্টাইল, মেগা সেলস, সেমিনার, বিটুবি ম্যাচমেকিং।

বিসিএস মহাসচিব বলেন, এবারের আয়োজনে আমরা তিন লাখ দর্শনার্থীর প্রত্যাশা করছি। স্থানীয় প্রযুক্তিপণ্য উৎপাদনকারী ও আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান, স্টার্টআপ কোম্পানি, সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভাবন থাকছে এই প্রদর্শনীতে। সেসাথে থাকছে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় বিভিন্ন সেমিনার, প্যানেল আলোচনা ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়নে নীতি-নির্ধারণী আলোচনা।

সংবাদ সম্মেলনে আয়োজন নিয়ে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও অতিরিক্ত সচিব মো. মামুনুর রশীদ ভূঞা, বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ সদস্য (বিনিয়োগ ও পার্ক সমন্বয়) যুগ্মসচিব জনাব মোহাম্মদ সাইফুল হাসান এবং বিসিএস সভাপতি মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী, এনডিসি বলেন, বাংলাদেশ এখন আর কেবল প্রযুক্তির ব্যবহারকারী নয়; বাংলাদেশ ধীরে ধীরে প্রযুক্তি উৎপাদন, উদ্ভাবন ও রপ্তানির একটি নির্ভরযোগ্য বৈশ্বিক হাব হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছে। আমরা চাই-ভবিষ্যতের যেকোনো সংকট মোকাবেলায় বাংলাদেশ নিজস্ব প্রযুক্তির ওপর ভর করেই এগিয়ে যাক।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব বলেন, পৃথিবীর উন্নত বিশ্বের মতো আমাদের দেশের মানুষেরও ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহারের প্রতি আগ্রহ রয়েছে। এটা প্রযুক্তিতে এগিয়ে যাওয়ার জন্য ইতিবাচক দিক। যেকোনো দেশের ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন বা রূপান্তর একটা চলমান প্রক্রিয়া। সে প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ ইতিমধ্যেই অনেকটা এগিয়ে গেছে। বর্তমান ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব মহোদয় বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে সেই ডিজিটাল রূপান্তরের কাজকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।

বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও অতিরিক্ত সচিব মো. মামুনুর রশীদ ভূঞা বলেন, এবারের এক্সপোতে দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ‘‘বাংলাদেশ টু দ্য গ্লোবাল’’ ধারণার মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশকে একটি প্রযুক্তিপণ্য উৎপাদন ও গবেষণার সম্ভাবনাময় গন্তব্য হিসেবে বিশ্বদরবারে তুলে ধরতে চাই।

হাই-টেক পার্কসমূহে আন্তর্জাতিক মানের অবকাঠামো, দক্ষ ও সাশ্রয়ী মানবসম্পদ এবং বিনিয়োগবান্ধব নীতিমালা নিশ্চিত করা হয়েছে। পাশাপাশি কর অবকাশ, ওয়ান-স্টপ সার্ভিস ও লজিস্টিক সুবিধাসহ বিভিন্ন সরকারি প্রণোদনা বিনিয়োগকারীদের জন্য কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, ডিজিটাল ডিভাইস অ্যান্ড ইনোভেশন এক্সপো ২০২৬–এর নতুন লোগোতে একটি মুষ্টিবদ্ধ হাতের প্রতীক ব্যবহার করা হয়েছে। এই প্রতীকটি আমাদের বিশ্বাস ও দর্শনকে স্পষ্টভাবে উপস্থাপন করে- ‘‘পিপলস পাওয়ার”।

এই লোগো প্রদর্শনীর মূল স্লোগান “বাংলাদেশ টু দ্য ওয়ার্ল্ড”-এর সঙ্গেও গভীরভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ। কারণ বৈশ্বিক পর্যায়ে বাংলাদেশের প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের অগ্রযাত্রার মূল চালিকাশক্তি হলো জনগণ-তাদের মেধা, শ্রম ও উদ্ভাবনী সক্ষমতা।

অতএব, এই এক্সপোর লোগো ও স্লোগান একসঙ্গে একটি সুস্পষ্ট বার্তা বহন করে-জনগণের শক্তির ওপর ভর করেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে বৈশ্বিক প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের মঞ্চে।

বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ সদস্য (বিনিয়োগ ও পার্ক সমন্বয়) যুগ্মসচিব জনাব মোহাম্মদ সাইফুল হাসান সকলকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, আমরা দেশি উদ্যোক্তা, বিদেশি বিনিয়োগকারী ও উদ্ভাবকদের একত্র করে শ্রমনির্ভর অর্থনীতি থেকে মেধা ও প্রযুক্তিনির্ভর অর্থনীতির দিকে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে চাই। যার মূল চালিকাশক্তি হবে-রপ্তানিমুখী শিল্পায়ন, দক্ষ ও উদ্ভাবনী জনশক্তি এবং একটি পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল সমাজব্যবস্থা। সেজন্য বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক এখন প্রযুক্তিপণ্য উৎপাদন ও গবেষণার জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত রয়েছে।

বিসিএস সভাপতি মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেন, ১৯৮৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া বিসিএস সারা বিশ্বের কাছে দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের সাফল্যকে তুলে ধরতে বিভিন্ন সময় তথ্যপ্রযুক্তি প্রদর্শনীর আয়োজন করে আসছে। বাংলাদেশ বিনিয়োগবান্ধব, নীতিগতভাবে সহযোগিতাপূর্ণ এবং দীর্ঘমেয়াদি অংশীদারিত্বে বিশ্বাসী। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, ‘ডিজিটাল ডিভাইস অ্যান্ড ইনোভেশন এক্সপো ২০২৬’-এর সময়োপযোগী বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক সেমিনার, আলোচনা সভার মাধ্যমে দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে একটা মেলবন্ধন তৈরি হবে। তথ্যপ্রযুক্তিতে দেশের অগ্রযাত্রাকে বেগবান করতে এই প্রদর্শনী সবার জন্যই শিক্ষণীয় হবে।

মেলা কর্তৃপক্ষ আশা করছে, ‘ডিজিটাল ডিভাইস অ্যান্ড ইনোভেশন এক্সপো ২০২৬’ বাংলাদেশের আইসিটি, টেলকো এবং ইলেকট্রনিক্স উৎপাদনকারীদের প্রতিষ্ঠানসমূহকে তাদের পণ্য সারাদেশসহ বিশ্বব্যাপী ক্রেতাদের কাছে প্রচারকার্যে সাহায্য করবে।

দেশীয় ও আন্তর্জাতিক শতাধিক তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান, সংগঠন এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও অধিদপ্তর এ প্রদর্শনীতে অংশ নিচ্ছে। স্থানীয় ডিজিটাল পণ্য উৎপাদক প্রতিষ্ঠান ও সার্ভিস প্রোভাইডারস, স্থানীয় উদ্ভাবনী প্রদর্শক, আন্তর্জাতিক বিখ্যাত ব্রান্ড, কম্পিউটার গেমিং উন্নয়নপ্রতিষ্ঠান, হার্ডওয়্যার খাতে সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান, ওইম (অরিজিনাল ইকুয়েপমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারারস) এবং সফটওয়্যার সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান এতে অংশ নেবে।

তথ্যপ্রযুক্তির নতুন সব পণ্য, সেবা, জীবনশৈলী ও ধারণা উপস্থাপন করবে এসব প্রতিষ্ঠান। তথ্যপ্রযুক্তির সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রকল্প, কর্মসূচি এবং উদ্যোগগুলোও এতে উপস্থাপন করা হবে। ১৩০টি প্যাভিলিয়ন ও স্টলে এসব প্রদর্শন করা হবে।

প্রদর্শনীতে যৌথভাবে সহযোগিতা করবে আইসিটি বিভাগের এটুআই প্রকল্প, ডিপার্টমেন্ট অব আইসিটি, ন্যাশনাল সাইবার সিকিউরিটি এজেন্সি (এনসিএসএ), বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি), স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেড, প্রত্যয়নকারী কর্তৃপক্ষ নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় কন্ট্রোলার অব সার্টিফাইং অথরিটিজ (সিসিএ)। সহযোগিতায় থাকবে বাংলাদেশ সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস), বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কল সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিং (বাক্কো), ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি), ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব), বাংলাদেশ আইসিটি জার্নালিস্ট ফোরাম (বিআইজেএফ) এবং টেকনোলজি মিডিয়া গিল্ড বাংলাদেশ (টিএমজিবি)।

পাঠকের মন্তব্য