পল্লী বিদ্যুতে দমন পীড়ন অব্যাহত; পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করছে আরইবি

পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) এবং পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি (পবিস) এর মধ্যে বিদ্যমান সমস্যা সমাধানে গঠিত জাতীয় কমিটির কাজ চলমান থাকায় পবিসের পক্ষ থেকে সকল ধরনের কর্মসূচি প্রত্যাহার করা সত্ত্বেও কর্মপরিবেশ স্থিতিশীল না করে আরইবি কর্তৃক পবিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দমন পীড়নের উদ্দেশ্যে স্ট্যান্ড রিলিজ, ওএসডি এবং দেশের বিভিন্ন প্রান্তে শাস্তিমূলক বদলি অব্যাহত রাখা হয়েছে।

ধারাবাহিকভাবে হামলা, মামলা, চাকরিচ্যুতি, স্ট্যান্ড রিলিজ, ওএসডি অব্যাহত রাখার পর গত ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ থেকে ৫ শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে নিজ জেলা থেকে গড়ে ৫০০-৬০০ কি:মি: দূরে বদলি করা হয়েছে। সর্বশেষ গত ২১ জানুয়ারি, ২০২৫ তারিখে ভোলা পবিসে আরইবি চেয়ারম্যান এর সাথে উন্মুক্ত মতবিনিময় সভার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশের কারণে গত ২৭-০১-২০২৫ তারিখে ০২ জন এবং ফেসবুক কমেন্ট, শেয়ারের জন্য ২৮-০১-২০২৫ তারিখে পটুয়াখালী পবিসের ০১ জন মিটার রিডারকে বিনা নোটিশে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। 

পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড ক্ষমতার অপব্যবহার এবং অপপ্রয়োগের মাধ্যমে পল্লী বিদ্যুৎ খাতকে অস্থিতিশীল করা এবং সরকারের পল্লী বিদ্যুৎ সিস্টেমের সংস্কার কার্যক্রমে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির অপচেষ্টা করছে মর্মে প্রতীয়মান হচ্ছে। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ সর্বদা গ্রাহক সেবায় বদ্ধ পরিকর; কিন্তু আরইবি'র এই স্বেচ্ছাচারিতা এবং উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ড চলমান থাকলে ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ আরইবির প্রতি বিক্ষুব্ধ হয়ে পুনরায় কর্মসূচি ঘোষণা করার সম্ভাবনা দেখা দিচ্ছে। ফলে পল্লী বিদ্যুতের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হতে পারে।

উল্লেখ্য যে, গত ২০ জানুয়ারি, ২০২৫ তারিখে আরইবি-পবিস বিদ্যমান সংকট নিরসনে সংস্কারের মাধ্যমে দ্বৈতনীতি পরিহারপূর্বক একীভূতকরণ এবং চাকরিচ্যুত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরিতে পুনর্বহাল ও মামলা প্রত্যাহার এবং চুক্তিভিত্তিক/অনিয়মিত কর্মচারীদের নিয়মিতকরণের দাবিতে বিদ্যুৎ উপদেষ্টা বরাবর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ৩০ হাজার কর্মীর গণস্বাক্ষর সম্বলিত স্মারকলিপি প্রেরণ করা হয়।

বিগত সময়ে আরইবি'র দুর্নীতি ও লুটপাটের খবর বিভিন্ন জাতীয় মিডিয়ায় ব্যাপক প্রচার হওয়া সত্ত্বেও আরইবি অদ্যাবধি সে বিষয়ে কোন ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। এছাড়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির এজিএম, ডিজিএম, জিএম পদে পদোন্নতিতে সিনিয়রিটি অনুসরণ না করে যোগ্য কর্মকর্তাকে বঞ্চিতপূর্বক পদোন্নতি প্রদান করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত আরইবি পবিসের অগণিত কর্মীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ এবং দমন পীড়ন করলেও আরইবির কারো বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করে দুর্নীতিকে পৃষ্ঠপোষকতা করছে। 

আরইবি ও পবিসের বিদ্যমান বৈষম্য, শোষন ও নিপীড়ন বন্ধ এবং আরইবির দুর্নীতি ও নিম্নমানের মালামাল ক্রয়ের কারণে সৃষ্ট গ্রাহক ভোগান্তি নিরসনে গত জানুয়ারি/২৪ থেকে পবিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ আরইবি-পবিস দ্বৈত ব্যবস্থার সংস্কারে দাবি জানিয়ে আসছেন। উক্ত দাবির প্রেক্ষিতে বিভিন্ন সময়ে গ্রাহক সেবা ও বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু রেখে নানা কর্মসূচী পালন করা হয়। সময়ের চাহিদায় গত আগস্ট/২৪ মাসে কমিটি গঠন হলেও আরইবির অসহযোগিতা এবং বিদ্যমান কাঠামো সংস্কারে ইতিবাচক ভূমিকা না থাকায় কার্যকর সমাধান হয়নি। পরবর্তীতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে গত ২৩ অক্টোবর, ২০২৪ তারিখে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয়।

উল্লেখ্য যে, মাঠ পর্যায়ে কোন কর্মসূচী না থাকা সত্ত্বেও গত ১৬ অক্টোবর/২৪ তারিখে আরইবি কর্তৃক পবিসের ১০ জন কর্মকর্তাকে বিনা নোটিশে চাকরিচ্যুত এবং একই তারিখ দিবাগত রাতে মামলা দায়ের করা হয়। পরদিন সকাল থেকে পবিসের কর্মকর্তাদের গ্রেফতার এবং আরো ১৪ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বিনা নোটিশে চাকরিচ্যুত করা হয়। এছাড়া আইন শৃঙ্খলা বাহিনী দ্বারা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেধড়ক মারধর এবং ধরপাকড় করা হয়। যার প্রেক্ষিতে পবিসের কর্মীরা আতঙ্কিত এবং কিংকর্তব্যবিমূড় হয়ে বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুৎ বন্ধের মতো ঘটনা ঘটে। পরবর্তীতে উক্ত অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ এবং অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত কমিটির উপর আস্থা রেখে পবিসের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সকল ধরনের কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হয়।

এমতাবস্থায়, আরইবি কর্তৃক পবিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপর চলমান দমন পীড়ন ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা বন্ধ, পল্লী বিদ্যুৎ সংস্কারে সরকারের গঠিত কমিটির কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালনা এবং পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মপরিবেশ স্থিতিশীল রাখতে সরকার, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, সুশীলসমাজ, শিক্ষক-ছাত্র-জনতা সহ সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা কামনা করছি। সেই সাথে দ্বৈতনীতি পরিহারপূর্বক পল্লী বিদ্যুৎ সিস্টেমকে টেকসই এবং গ্রাহকবান্ধব সিস্টেমে রূপান্তরের লক্ষ্যে দ্রুত সময়ের মধ্যে কমিটির কার্যক্রম সম্পন্নের দাবি জানাচ্ছি। 

পাঠকের মন্তব্য