পানি উন্নয়ন বোর্ডে অস্বাভাবিক পদোন্নতি: ৪ মাসে উপসহকারী প্রকৌশলী থেকে ৬ষ্ঠ গ্রেডের কর্মকর্তা!
-
- - নিজস্ব -
- প্রতিবেদক --
- ২৭ অগাস্ট, ২০২৫
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডে (বাপাউবো) উপসহকারী প্রকৌশলীদের অস্বাভাবিক পদোন্নতি নিয়ে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। ১০ম গ্রেড থেকে ৯ম গ্রেডে উন্নীত ডিপ্লোমা প্রকৌশলীরা মাত্র ৪ মাসের ব্যবধানেই প্রভাব খাটিয়ে ৬ষ্ঠ গ্রেডের সমমর্যাদার উপবিভাগীয় প্রকৌশলী পদে বসে যাচ্ছেন।
সূত্র জানায়, ৬ষ্ঠ গ্রেডের এ পদে পদোন্নতি পেতে সহকারী প্রকৌশলী পদে ৫বছরের অভিজ্ঞতা, কর্মদক্ষতা ও জ্যেষ্ঠতা ভিত্তি হলেও বাস্তবে হচ্ছে উল্টোটা। সদ্য পদোন্নতি পাওয়া ডিপ্লোমা প্রকৌশলীরা সিনিয়রদের উপেক্ষা করে প্রভাব খাটিয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব গ্রহণ করছেন। এতে শুধু কর্মপরিবেশই বিঘ্নিত হচ্ছে না, বরং ৩-৪ বছরের অভিজ্ঞ বি এস সি সহকারী প্রকৌশলীরাও তাদের জুনিয়রদের অধীনে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন।উপ-সহকারী প্রকৌশলীদের মধ্যে প্রচলিত রয়েছে যে ৯ম গ্রেডে পদোন্নতি পাওয়া মাত্রই ৬ষ্ঠ গ্রেড এর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী পদের দায়িত্ব তারা কিনে নিতে পারেন। পদোন্নতি ও বদলির অন্যান্য আদেশগুলো বাপাউবোর ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হলেও এই ধরণের অনিয়ম এর আদেশগুলো বাপাউবোর ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়না, যা প্রতিষ্ঠানের স্বচ্ছতা কে প্রশ্নবিদ্ধ করে।
সম্প্রতি বাপাউবোর মুন্সীগঞ্জ জেলার লৌহজং পানি উন্নয়ন উপ-বিভাগে ঠিক এমনই ঘটনা ঘটেছে। জানা যায়, মার্চ ২০২৫-এ ৯ম গ্রেডে পদোন্নতি পাওয়া উপসহকারী প্রকৌশলী আশিফ সরোয়ার
আগস্ট ২০২৫-এই ৬ষ্ঠ গ্রেডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী পদে বসেছেন। অথচ সিনিয়রিটি অনুযায়ী তার এই পদে উন্নীত হতে অন্তত ১৩ বছর সময় লাগত। অর্থাৎ তিনি ২০৩৮ সালের আগে এ পদে আসতে পারতেন না।
কিন্তু প্রভাব খাটিয়ে প্রায় ২০০-রও বেশি জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা থাকা সত্ত্বেও ওই পদের দায়িত্ব পেয়েছেন তিনি। এমন অস্বাভাবিক পদায়ন নিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
সিনিয়রটি মেনে উপবিভাগীয় প্রকৌশলী পদে পদায়নের জন্য বর্তমানে জনবলের কোনো ঘাটতি নেই।
উপরন্তু উক্ত ডিপ্লোমা প্রকৌশলী আশিফ সারওয়ার ও তার সহধর্মিনী ডিপ্লোমা প্রকৌশলী শারমিন আফরোজ উভয়েই ফ্যাসিবাদী রাজনীতির সাথে পুরোপুরি জড়িত ছিলেন। তিনি বাপাউবো বঙ্গবন্ধু ডিপ্লোমা প্রকৌশল পরিষদ এর কর্মী ও তার সহধর্মিনী বাপাউবো বঙ্গবন্ধু ডিপ্লোমা প্রকৌশল পরিষদ এর পদধারী নেত্রী(সহ: মহিলা বিষয়ক সম্পাদক) ছিলেন। ফ্যাসিবাদী আমলে বিভিন্ন অপকর্মে জড়িত ছিলেন তারা এবং কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। তখন উপার্জিত অবৈধ অর্থ দিয়ে তারা এখনো প্রভাব বিস্তার করে চলেছে। জুলাই আন্দোলনে ফ্যাসিবাদী এই দম্পতি সরাসরি ছাত্র জনতার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন এবং প্রচারণা চালিয়েছেন।
কর্মকর্তাদের অভিযোগ, বাপাউবোতে এখন এক ধরনের অঘোষিত "তদবির বাণিজ্য" চলছে। সিনিয়রিটি উপেক্ষা করে কোটি টাকার লেনদেনের মাধ্যমে এসব প্রহসন এর আদেশ জারি হচ্ছে। ফলে প্রকৃত যোগ্য প্রকৌশলীরা পদোন্নতির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞ প্রকৌশলীরা আশঙ্কা করছেন, এভাবে সিনিয়রদের হেয় করে জুনিয়রদের দায়িত্ব দিলে অফিসে শৃঙ্খলা নষ্ট হবে, কাজের মান ব্যাহত হবে এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের কার্যক্রমে অনিশ্চয়তা তৈরি হবে।
তারা বলছেন, অদ্ভুত ও বিতর্কিত এ ধরনের আদেশ অবিলম্বে প্রত্যাহার না করলে অসম প্রতিযোগিতা আরও বাড়বে এবং " পদোন্নতির বাজার" আরও রমরমা হবে।