সড়ক দুর্ঘটনায় হাসপাতালে যুবক, সেবা করতে সেখানেই বিয়ে করলেন কনে

অমরিতা সরকার ভালোবাসার মানুষকে ধুমধাম করে বিয়ে করতে পারতেন সাড়ে তিন মাস পর। কিন্তু অসুস্থ প্রিয়জনের পাশে থাকতে ও সেবা করতে অমরিতা সিদ্ধান্ত নেন হাসপাতালেই বিয়ে করবেন। ধর্মীয় রীতিনীতি মেনেই ভালোবাসার মানুষ আনন্দ সাহাকে হাসপাতালেই বিয়ে করেন। বৃহস্পতিবার রাতে মানিকগঞ্জ শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ওই নবদম্পতির বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়।

প্রচলিত আয়োজনের বাইরে গিয়ে বিয়ে করায় এ ঘটনা নেট দুনিয়ায় আলোড়ন সৃস্টি করেছে। তাদের বিয়ের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর প্রশংসা কুড়াচ্ছেন নতুন এই দম্পতি।

ছবিতে দেখা যায়, হাসপাতালের বিছানায় দুই হাত ও পায়ে ব্যান্ডেজ নিয়ে বর আনন্দ শুয়ে আছেন। কনে অমরিতা পানপাতা দিয়ে মুখমণ্ডল ঢেকে বরের দিকে এগিয়ে আসেন। এরপর বরের চারদিকে সাত পাক ঘোরেন কনে নিজেই। মালাবদলের পর বর বিছানায় শুয়ে তার নববিবাহিত স্ত্রীর মাথায় সিঁদুর পরিয়ে দেন।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, পরিচয়ের পর থেকেই ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে ওঠে আনন্দ সাহা ও অমরিতা সরকারের। দুই পরিবারের সম্মতিতে বিয়ের দিনক্ষণও ঠিক করা হয় ১৫ ডিসেম্বর। জুন মাসে দুইজনের আশীর্বাদ অনুষ্ঠানও হয়ে যায়। এরই মধ্যে গত ৭ আগস্ট ঢাকা থেকে মানিকগঞ্জে মোটরসাইকেল নিয়ে ফেরার পথে ট্রাকের ধাক্কায় গুরুতর আহত হন আনন্দ সাহা। তাঁর দুই হাত, ডান পা ভেঙে যায়। কোমরে প্রচণ্ড আঘাত পান। এরপর তাঁকে ঢাকার শ্যামলীতে একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয়।

সেখানে দুই সপ্তাহ চিকিৎসার পর তাঁকে মানিকগঞ্জ শহরের বেসরকারি আফরোজা বেগম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে চিকিৎসা চলছে। এখনও তিনি বিছানা থেকে উঠতে পারেন না। এই পরিস্থিতিতে অমরিতা তাঁর পাশে থাকার কথা পরিবারকে জানান। পরে দুই পরিবারের সিদ্ধান্তে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে হাসপাতালেই আনন্দ ও অমরিতা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। এ সময় দুই পরিবারের ঘনিষ্ঠজনেরা উপস্থিত ছিলেন।

নববধূ অমরিতা সাহা জানান, আনন্দ সাহার সঙ্গে তার পরিচয় এক বছরের বেশি সময় ধরে। এর মধ্যে দুই পরিবারের সম্মতিতে তাদের বিয়ের তারিখ নির্ধারণ হয় ১৫ ডিসেম্বর। হঠাৎ আনন্দ দুর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। এ অবস্থায় তিনি নিজে থেকে কিছুই করতে পারেন না। তার এই সংকটের সময়ে পাশে থেকে সেবা করার জন্যই বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেই।

আনন্দ সাহার পিতা অরবিন্দ সাহা জানান, তার ছেলে আনন্দ মানিকগঞ্জ শহরে ব্যবসা করেন। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত হওয়ার আগেই তার ছেলের সঙ্গে ঘিওর উপজেলার বানিয়াজুর দুর্গাপাড়া গ্রামের সুবোধ সরকারের মেয়ে অমরিতা সাহার বিয়ে ঠিক হয়। কিন্তু আনন্দের সেবা করার জন্য অমরিতা নিজেই বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেন। পরে দুই পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে ধর্মীয় ও সামাজিক রীতিনীতি মেনে তাদের বিয়ে দেওয়া হয়।

আফরোজা বেগম হাসপাতালের অপারেশন ম্যানেজার দিলীপ কুমার মন্ডল সমকালকে বলেন, আনন্দ সাহা তাদের হাসপাতালে ভর্তি হন ২০ দিন আগে। বৃহস্পতিবার বিকেলে দুই পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়, কেবিনে তাদের বিয়ের আয়োজন করার জন্য। পরে হাসপাতালের পক্ষ থেকে অডিটরিয়ামে ধর্মীয় রীতিনীতি মেনে বিয়ে আয়োজন করা হয়।

আফরোজা বেগম হাসপাতালের মেডিকেল অ্যান্ড ইউনিট প্রধান সিরাজুল ইসলাম বলেন, আনন্দ সাহা আগের চেয়ে এখন অনেকটাই সুস্থ। তবে পুরোপুরি সুস্থ হতে আরো তিন মাস সময় লাগবে।

পাঠকের মন্তব্য