বনানীতে প্রকৌশলী আহসানুল রাসেলের ওপর হত্যাচেষ্টা: সাংবাদিকও লাঞ্ছিত
-
- - নিজস্ব -
- প্রতিবেদক --
- ৬ অক্টোবর, ২০২৫
রাজধানীর বনানীতে প্রাণনাশের উদ্দেশ্যে প্রকৌশলী মু. আহসানুল রাসেল–এর ওপর সংঘবদ্ধ হামলার অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগে বলা হয়েছে, রবিবার (৫ অক্টোবর) বিকেলে বনানীতে সন্ত্রাসী টোকাই অপু, কাইয়ূম, হাবলু ও মাসুম নামে চার ব্যক্তি এবং তাদের নেতৃত্বাধীন বহিরাগত একদল সন্ত্রাসী রাসেলকে লক্ষ্য করে পরিকল্পিতভাবে এ হামলা চালায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্রকৌশলী রাসেল, যিনি, ইঞ্জিনিয়ার'স ইনস্টিটিউশন অফ বাংলাদেশ (আইইবি) এর এডহক কমিটির সম্মানিত সহকারি সাধারণ সম্পাদক ও এসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (এ্যাব)–এর আহ্বায়ক কমিটির সদস্য, ওই দিন বিকেল ৫ টার দিকে আহ্বায়ক প্রকৌশলী শাহরিন ইসলাম তুহিনকে শুভেচ্ছা জানাতে তাঁর বনানী অফিসে যান। তবে তিনি নির্ধারিত সময়ের কিছু আগে বিকেল ৪টা ১৫ মিনিটে পৌঁছান।
রাসেল অভিযোগ করেন, তিনি গাড়ি থেকে নামার সঙ্গে সঙ্গেই সেখানে উপস্থিত সন্ত্রাসী টোকাই অপু, কাইয়ূম, হাবলু ও মাসুম তাঁকে ঘিরে ফেলে। এ সময় সরকারি চাকরিজীবী পরিচয়দানকারী অপু তাঁর কলার ধরে টেনে নিয়ে যায় এবং আশেপাশে থাকা ১৫–২০ জন বহিরাগতকে উদ্দেশ্য করে বলে, “মার ওরে!” — এরপর বাকি তিনজনও “ওরে মার” বলে উসকানি দেয়।
পরবর্তীতে ভাড়াটে বাহিনী লাঠি-সোটা নিয়ে রাসেলের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। তিনি প্রাণভয়ে দৌড়ে পালাতে চাইলে, পেছন থেকে অপু লাথি মেরে তাঁকে ফেলে দেয়।
এরপর নির্মমভাবে প্রায় ১৫ মিনিট ধরে কিল-ঘুষি ও লাঠির আঘাতে তাঁকে মারধর করা হয়। আহত রাসেল মাটিতে পড়ে গেলে হামলাকারীরা তাতেও থামেনি।
প্রকৌশলী রাসেলের দাবি, হামলাকারীদের উদ্দেশ্য ছিল তাঁকে হত্যা করা। “আমি মাটিতে পড়ে ছিলাম, তবুও তারা থামেনি। তখন আমার মনে হচ্ছিল আমি হয়তো আর বাঁচব না,” — বলেন তিনি।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন সাংবাদিক ও প্রকৌশলী শেখ শাহরুখ ফারহান, যিনি সহকর্মীকে উদ্ধার করতে গেলে নিজেও আঘাতপ্রাপ্ত হন। তিনি বলেন,
“আমি সম্পূর্ণ নিরীহ অবস্থায় উপস্থিত ছিলাম। হঠাৎ সন্ত্রাসী অপু ও তার সহযোগীরা আমার প্রতিও উস্কানিমূলক কথা বলে, কিল, লাথি ঘুসি মারে ধাক্কাধাক্কি করে, এমনকি আমার মোবাইল ও মানিব্যাগ কেড়ে নেয়। কিছুক্ষণ পরে তা ফেরত দেয়, কিন্তু আমি ততক্ষণে আহত।”
আহত প্রকৌশলী রাসেল জানান, তিনি বর্তমানে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর ব্যথা রয়েছে।
তিনি ইতিমধ্যে বনানী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।
এ বিষয়ে আহ্বায়ক প্রকৌশলী শাহরিন ইসলাম তুহিনকে লিখিতভাবে অবহিত করা হয়েছে এবং অফিসের সিসিটিভি ফুটেজ সংরক্ষণ ও প্রদানের অনুরোধ জানানো হয়েছে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশ পেলে হামলাকারীদের মুখ ও পুরো ঘটনার ক্রমপুঞ্জ স্পষ্ট হয়ে উঠবে।
স্থানীয়দের মতে, অভিযুক্ত অপু নিজেকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পরিচয়ে উপস্থাপন করে—কখনও সরকারি কর্মকর্তা, কখনও প্রকৌশলী, আবার কখনও রাজনৈতিক পরিচয়ে।
তাঁর নেতৃত্বে গড়ে ওঠা একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী সম্প্রতি প্রকৌশলী সমাজে ভয়ভীতি সৃষ্টির চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে বনানী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বলেন, “ঘটনার বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। প্রাথমিক তদন্ত চলছে। ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করে ঘটনার সত্যতা যাচাই করা হবে।”
প্রকৌশলী ও সাংবাদিক মহলে এই হামলার ঘটনায় ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে প্রকৌশলী ও সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন।