চুয়াডাঙ্গায় ঘরে ঘরে জ্বর-সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত শিশুরা

ঋতু পরিবর্তনের প্রভাবে প্রকৃতিতে ইতোমধ্যেই ধরা দিচ্ছে শীতের আগমনী বার্তা। চুয়াডাঙ্গায় ঘরে ঘরে বাড়ছে জ্বর, সর্দি, কাশি ও গলা ব্যথার রোগী। প্রাপ্তবয়স্কদের পাশাপাশি সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। প্রতিদিনই জ্বর ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশুরা ভর্তি হচ্ছে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে।

গত ১০ অক্টোবর থেকে ২০ অক্টোবর রাত ৮টা পর্যন্ত (১১ দিনে) হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছে ২৭৬ জন শিশু রোগী। শুধু ইনডোর নয়, বহিঃবিভাগেও রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা। সদর হাসপাতালের বহিঃবিভাগে প্রতিদিন গড়ে ২০০ থেকে ৩০০ শিশু রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. মাহবুবুর রহমান মিলন বলেন, এটি মূলত ঋতু পরিবর্তনজনিত ভাইরাল সংক্রমণ। অধিকাংশ শিশুই নিউমোনিয়া, ঠান্ডা, কাশি ও ভাইরাল জ্বরে আক্রান্ত। শীত পুরোপুরি শুরু হলে এই সংক্রমণ আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এখনই অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে।

সোমবার (২০ অক্টোবর) রাতে সদর হাসপাতালের পুরনো ভবনের শিশু ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিটি বেডে একাধিক শিশু ভর্তি। নার্স ও চিকিৎসকরা রোগীর সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। তাদের নিরলস সেবায় অনেক অভিভাবক সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।

রাতে শিশু ওয়ার্ডে ডিউটি একজন নার্স বলেন, এখন শিশু রোগীর চাপ আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় বেশি। লোকবল সংকট থাকায় আমাদের অতিরিক্ত দায়িত্ব নিতে হচ্ছে। তবে চেষ্টা করছি যেন কোনো শিশুর চিকিৎসা বিলম্ব না হয়।

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার ছয়ঘরিয়া গ্রামের মিন্টু রহমান জানান, আমার ছেলের হঠাৎ জ্বর আর কাশি শুরু হয়। বাড়িতে ওষুধ খাওয়ানোর পরও কমছিল না, তাই হাসপাতালে আনি। ডাক্তাররা বলেছেন, ছেলেটার নিউমোনিয়া হয়েছে। চিকিৎসা নিয়ে কোনো অভিযোগ নেই।

আখি তারা নামের এক নারী বলেন, নাতীকে নিয়ে হাসপাতালে এসেছি। জায়গা না থাকায় মেঝেতেই চিকিৎসা নিতে হচ্ছে।

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার আলমডাঙ্গা এলাকার গৃহিণী রওশন আরা বলেন, হঠাৎ করে দুদিন আগে আমার ৮ মাসের বাচ্চা ঠান্ডা-কাশিতে আক্রান্ত হয়। স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা করিয়ে না কমায় আজ হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছি। এ ছাড়া, আমার পরিবারের সব সদস্যই জ্বর-কাশি ও গলা ব্যথায় আক্রান্ত।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. মাহবুবুর রহমান মিলন বলেন, শীতের আগমন, অর্থাৎ আবহাওয়া পরিবর্তনজনিত কারণে সদর হাসপাতালে শিশু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে৷ অধিকাংশ শিশুই নিউজমোনিয়া আক্রান্ত। প্রতিদিন সদর হাসপাতালের বহিঃবিভাগে আমরা দুই শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মিলে গড়ে ২০০-৩০০ শিশু রোগী দিতে হচ্ছে। অধিকাংশ শিশুরাই ঠান্ডা-কাশি ও জ্বরে আক্রান্ত। আর কয়েকদিন পরই শীত চলে আসবে, এতে আরও রোগীর চাপ বৃদ্ধি হবার সম্ভাবনা রয়েছে। শীতের সময় রোটা ভাইরাসের কারণে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়। তাই এ সময় বাচ্চাদের সতর্ক রাখতে হবে।

তিনি বলেন, বাচ্চাদের বুকের দুধ খাওয়ানো চালিয়ে যেতে হবে। ছয় মাসের বড় বাচ্চাদের অন্যান্য খাবার দিতে হবে। আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে এক ব্যাকটেরিয়ায় বৃদ্ধি পায়। এতেই শিশুদের যত্ন বা সচেতন না হলে তাদের বিভিন্ন রোগে আক্রান্তের ঝুঁকি থাকে।

পাঠকের মন্তব্য