রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহকে গুলি করে হত্যা

কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলায় রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। বুধবার রাত পৌনে ১০টার দিকে কুতুপালং লম্বাশিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এর আগে রাত সাড়ে ৮টার দিকে ক্যাম্পের একটি দোকানে তাকে গুলি করা হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বুধবার ওই এলাকায় কোনো অভিযান ছিল না। ধারণা করা হচ্ছে, রোহিঙ্গাদের মধ্যে গোষ্ঠীগত দ্বন্দ্বের জেরে তাকে গুলি করা হয়েছে।

ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম বলেছেন, কারা এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। 

নিহত মুহিবুল্লাহ রোহিঙ্গাদের মধ্যে জনপ্রিয় নেতা ছিলেন। রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে কথা বলার জন্য তিনি জাতিসংঘে গিয়েছিলেন। এছাড়া তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গেও সাক্ষাত করেছিলেন। রোহিঙ্গাদের অধিকার দিয়ে তিনি সব সময় বিদেশি বিভিন্ন প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করে আসছিলেন। তার মৃত্যুতে লোকজনের মধ্যে চরম আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

পুলিশ জানিয়েছে, রাত সাড়ে ৮টার দিকে কুতুপালং- ১ (পূর্ব) ক্যাম্পে একটি দোকানে বসেছিলেন মুহিবুল্লাহ। এই সময় ১০ থেকে ১২ জন দ্রুত এসে দোকানটি ঘিরে ফেলে। কিছু বুঝে উঠার আগেই তারা মুহিবুল্লাহকে বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি করে। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর তারা চলে যায়। এই সময় স্থানীয় লোকজন এই ঘটনা প্রত্যক্ষ করলেও সন্ত্রাসীদের ভয়ে কেউ এগিয়ে আসেনি। তারা চলে যাওয়ার পর মুহিবুল্লাহকে উদ্ধার করে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নেওয়া হলে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

মুহিবুল্লাহ রোহিঙ্গা সংগঠন নিয়ে কাজ করা আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যানিটি রাইটস (এআরএসপিএইচ)-এর চেয়ারম্যান ছিলেন। ২০১৭ সালে ২৫ আগস্ট মিয়ানমার সেনাদের হাত থেকে প্রাণে বাঁচতে মংডু টাউনসিপের সিকদার পাড়া প্রাম থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন তিনি। আশ্রয় নেন কক্সবাজারের উখিয়া ক্যাম্পে।

গুলি করে হত্যার বিষয়টি নিশ্চিত করে ১৪ এপিবিএন অধিনায়ক পুলিশ সুপার মো. নাইমুল হক পরিবারের বরাত দিয়ে জানান, ‘উখিয়া ক্যাম্প-১ ইস্টে ডি ব্লকে তার ঘরে ৫-৬ জন অজ্ঞাতনামা বন্দুকধারী ঢোকে। এরপর মুহিবুল্লার সঙ্গে কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলেন। একপর্যায়ে বন্দুকধারীরা তাকে এলোপাতারি গুলি করে। এতে তিনি মাটিতে পড়ে যান। ঘটনার খবর পেয়ে আশপাশের লোকজনের সহায়তায় পুলিশ তাকে উদ্ধার করে ক্যাম্পের এমএসএফ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। মরদেহ কক্সবাজার মর্গে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।

প্রসঙ্গত, গত ২০১৯ সালে মাসের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা নাগরিকদের বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার দুই বছর পূর্তি উপলক্ষে উখিয়ার কুতুপালং এক্সটেনশন-৪ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মহাসমাবেশ করে রোহিঙ্গারা। এ সমাবেশে পাচঁ লাখ রোহিঙ্গা জড়ো হন। রোহিঙ্গাদের অধিকার আদায়ে গঠিত এআরএসপিএইচ চেয়ারম্যান রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ এ সমাবেশে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তখন থেকে তিনি আলোচনায় উঠে আসেন। 

২০১৯ সালে ১৭ জুলাই ধর্মীয় কারণে নির্যাতনের শিকার বিশ্বের ১৭টি দেশের ২৭ জন প্রতিনিধি হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তাদের মধ্যে একজন ছিলেন মুহিবুল্লাহ।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বেশ কয়েকটি সন্ত্রাসী গ্রুপের হাতে গত তিন বছরে অর্ধশত লোক খুন হয়েছে।

পাঠকের মন্তব্য