প্রিমিয়ার, ইউসিবিসহ ১০ বেসরকারি ব্যাংক মূলধন সংকটে
-
- - নিজস্ব -
- প্রতিবেদক --
- ২৪ অক্টোবর, ২০২৫
দিন যত যাচ্ছে ততই বেরিয়ে আসছে অনিয়ম, দুর্নীতি আর লুটপাটের কারণে ধসে পড়া ব্যাংক খাতের প্রকৃত ক্ষতচিহ্ন। শুধু খেলাপি ঋণ নয়, এর সাথে উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতিও। একই সাথে বাড়ছে ঘাটতিতে থাকা ব্যাংকের সংখ্যাও। চলতি বছরের মার্চের তুলনায় জুন শেষে ব্যাংক খাতের মূলধন ঘাটতি বেড়েছে ৪৫ হাজার ৬০৬ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
প্রতিবেদন বলছে, চলতি বছরের জুন শেষে ২৪টি ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৮৬৬ কোটি টাকা। আর গত মার্চ শেষে ২৩ ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ছিল ১ লাখ ১০ হাজার ২৬০ কোটি টাকা। সেই হিসাবে তিন মাসের ব্যবধানে ব্যাংক খাতে মূলধন ঘাটতি বেড়েছে ৪৫ হাজার ৬০৬ কোটি টাকা।
নতুন করে এনআরবিসি ও আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক ঘাটতিতে পড়েছে। এ সময় বিদেশি খাতের হাবিব ব্যাংক ঘাটতি থেকে বেরিয়ে গেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, গত ডিসেম্বরে ২৮টি ব্যাংককে ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়েছিল, যার ফলে কাগজে-কলমে মূলধন ঘাটতির পরিমাণ কমে এসেছিল। তবে সংশ্লিষ্টদের মতে, ব্যাংকিং খাতে প্রকৃত মূলধন ঘাটতির পরিমাণ অন্তত দুই লাখ কোটি টাকা।
এছাড়া, ব্যাংক খাতে মূলধন ঝুঁকিজনিত সম্পদের অনুপাত (সিআরএআর) বর্তমানে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৪ দশমিক ৪৭ শতাংশে, যা আন্তর্জাতিক মানদ- অনুযায়ী ন্যূনতম ১০ শতাংশ থাকা আবশ্যক। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ব্যাংকিং খাতের নানা অব্যবস্থাপনা ও ক্ষত এখন প্রকাশ পাচ্ছে, যা এই খাতের ভঙ্গুর অবস্থাকে সামনে নিয়ে এসেছে। যদি ব্যাংকগুলোকে ডেফারেল সুবিধা দেওয়া না হতো, তাহলে এ খাতে মার্চ শেষে সিআরএআর ঋণাত্মক হতো ১০ দশমিক ৯৭ শতাংশ। গত মার্চ শেষে ব্যাংক খাতে সিআরএআর ছিল ছয় দশমিক ৭৪ শতাংশ। সিআরএআর হচ্ছে একটি ব্যাংকের মূলধন ও তার ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের অনুপাত, যেখানে ঝুঁকির মাত্রা অনুযায়ী সম্পদের হিসাব নির্ধারণ করা হয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন শেষে চারটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক, ১০টি বেসরকারি ব্যাংক, আটটি ইসলামি ধারার ব্যাংক এবং দুটি বিশেষায়িত ব্যাংক মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঘাটতি দাঁড়িয়েছে জনতা ব্যাংকের। জুন শেষে এই ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ১৭ হাজার ২৫ কোটি টাকা। এরপর অগ্রণী ব্যাংকের ৭ হাজার ৬৯৮ কোটি টাকা। রূপালী ব্যাংকের চার হাজার ১৭৩ কোটি এবং বেসিক ব্যাংক তিন হাজার ৭৮৩ কোটি টাকার ঘাটতিতে পড়েছে।
বেসরকারি খাতের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঘাটতি ন্যাশনাল ব্যাংকের। জুন শেষে ব্যাংকের ঘাটতি দাঁড়িয়েছে আট হাজার ৪৫৯ কোটি টাকা। এরপর বেসরকারি খাতের ব্যাংকের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ঘাটতি এবি ব্যাংকের। যার পরিমাণ ছয় হাজার ৭৭৫ কোটি টাকা। তৃতীয় থাকা পদ্মা ব্যাংকের পাঁচ হাজার ৬১৯ কোটি টাকা। এছাড়া আইএফআইসি ব্যাংক চার হাজার ৫১ কোটি টাকা, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের এক হাজার ৮৭৮ কোটি, প্রিমিয়ার ব্যাংকের এক হাজার ৬৪০ কোটি, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের এক হাজার ৩৮৫ কোটি, এনআরবিসি ব্যাংকের ৩১৬ কোটি, সিটিজেন ব্যাংকের ৮৬ কোটি ও সীমান্ত ব্যাংক ৪৫ কোটি টাকা ঘাটতিতে পড়েছে।
শরিয়াহ্ভিত্তিক ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মূলধন ঘাটতি ইউনিয়ন ব্যাংকের। জুন শেষে এই ব্যাংকের ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২১ হাজার ৩৮৭ কোটি টাকা। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ঘাটতি ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের। এই ব্যাংকের ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৫০৪ কোটি টাকা। তৃতীয় সর্বোচ্চ ঘাটতি ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ১০ হাজার ৫০১ কোটি টাকা। এছাড়া গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের ঘাটতি পাঁচ হাজার ৫৫২ কোটি টাকা, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের দুই হাজার ৭৯ কোটি, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের এক হাজার ৯৭৫ কোটি, এক্সিম ব্যাংকের ৯০১ কোটি এবং আল-আরাফাহ্ ব্যাংকের ২৫৪ কোটি টাকা।
বিশেষায়িত ব্যাংকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঘাটতি বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের। শুধু বিশেষায়িত নয়, পুরো ব্যাংক খাতের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঘাটতিও এই ব্যাংকের। তথ্য অনুযায়ী জুন শেষে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২৯ হাজার ১৬১ কোটি টাকা। রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের ঘাটতি দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৬২০ কোটি টাকা।