মোবাইল টেকনিশিয়ান থেকে বিপুল সম্পদের মালিক সজীব

টেকনিশিয়ান হিসেবে চুক্তিভিত্তিক কাজের মাধ্যমে চাকরি জীবন শুরু করলেও এখন বিলাসী জীবন-যাপন করছেন। মোবাইল ফিক্সার নামে কোম্পানি খুলে বিভিন্ন শপিংমলে দোকান দিয়েছেন। বিভিন্ন ব্রান্ডের দামি গাড়িতে চলাফেরা করছেন। নিজ এলাকায় নির্মাণ করেছেন বিলাসবহুল বাড়ি, কিনেছেন অনেক জায়গা-জমি। হঠাৎ এমন বিপুল বিত্ত-বৈভবের মালিক বনে যাওয়া সজীব জমাদ্দার ওরফে আহমেদ বিন সজীবের বিরুদ্ধে অনৈতিক উপায়ে সম্পদ গড়ার অভিযোগ উঠেছে।

এমন অভিযোগে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগ দায়ের করেছেন কামরুল ইসলাম নামের মোতালেব প্লাজার একজন ব্যবসায়ী। সোমবার দুদকে এই অভিযোগটি জমা দেওয়া হয়।

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, সজীব মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে। ৪-৫ বছর আগে রাজধানীর হাতিরপুল মোতালিব প্লাজা শপিং কমপ্লেক্সে বিভিন্ন দোকানে মোবাইল টেকনিশিয়ান হিসেবে চুক্তিভিত্তিক কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। সাম্প্রতিক সময়ে সজীব জমাদ্দারের বেশ কিছু বিলাসী কর্মকাণ্ড আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছে। যা রীতিমতো মোতালিব প্লাজা মার্কেটের দীর্ঘদিনের পুরানো ব্যবসায়ীদের মাঝে হইচই ফেলে দিয়েছে। যা দেখে রীতিমত সবাই অবাক হয়ে গেছেন।

অভিযোগপত্রে আরও উল্লেখ করা হয়, মার্কেটের পুরানো ব্যবসায়ীরা যখন বৈধভাবে ব্যবসা করে ভাঙা সাইকেল ও মোটরসাইকেল নিয়ে মার্কেটে আসেন, তখন চার বছরে সজীব জমাদ্দার মাজেন্ডা ব্র্যান্ড, হ্যারিয়ার ব্র্যান্ড ও স্পোর্টসের মতো বিলাসবহুল গাড়ি নিয়ে মার্কেটে প্রবেশ করেন।

লিখিত অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, সজীব জমাদ্দার প্রতিটি গাড়ি নিজ নামে ক্রয় করেছেন, যার গড় মূল্য ৬০ লাখ টাকা। সজীব নিজ নামে কোম্পানিও খুলেছেন। যার নাম দিয়েছেন মোবাইল ফিক্সার। এরই মধ্যে সজীব নিজ কোম্পানির নামে মোতালিব প্লাজা শপিং কমপ্লেক্সে ১০টির অধিক দোকান ভাড়া নিয়েছেন। প্রতিটি দোকান ভাড়া নিতে অ্যাডভান্স বাবদ সর্বনিম্ন ১০ লাখ টাকা দিতে হয়েছে। বসুন্ধরা সিটি এবং যমুনা ফিউচার পার্কেও দোকান রয়েছে তার। সব দোকান ভাড়া বাবদ অ্যাডভান্স করেছেন মোট তিন কোটি টাকারও বেশি। এছাড়াও চট্টগ্রামের তার দোকান রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।

সজীব মোতালিব প্লাজায় নিজস্ব আলিশান ফ্ল্যাটে থাকেন। সজীব ইউটিউবার তৌহিদ আফ্রিদির মাধ্যমে সমালোচিত সাবেক ডিবি প্রধান হারুন অর রশিদের সঙ্গে সখ্য গড়েন। বিভিন্ন সময়ে ডিবি সদস্যদের দ্বারা জব্দকৃত মোবাইল নিয়ে এসে টাচ-ডিসপ্লে খুলে অধিক দামে বিক্রি করে রাতারাতি শত কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। শুধু রাজধানীতে নয় সজীব তার নিজ এলাকায়ও করেছেন বিলাস বহুল বাড়ি, ক্রয় করেছেন অনেক জায়গা জমি, উল্লেখ করেন অভিযোগকারী।

জানা গেছে, রাজধানী ঢাকাতে বিতর্কিত ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর ছত্রছায়ায় চলতেন সজীব। গোলাম রাব্বানীর নাম-পরিচয় ব্যবহার করে তিনি ইতোমধ্যে শত কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে। ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি জড়িত থাকার কারণে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র-জনতার যৌক্তিক আন্দোলনকে প্রতিহত করতে ছাত্রলীগের এক নেতাকে বিপুল অংকের টাকাও দিয়েছেন বলে অভিযোগ এসেছে এই টেকনিশিয়ানের বিরুদ্ধে।

দুদকের একটি সূত্র এই অভিযোগ জমা পড়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এ ব্যাপারে তদন্ত করে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সজীব জমদ্দার বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো ভুল। বসুন্ধরা, যমুনা ও মোতালিব প্লাজায় আমার মোট ছয়টি দোকান রয়েছে। যমুনা ফিউচার পার্কে দুই লাখ টাকা ও বসুন্ধরা সিটি কমপ্লেক্সে ৬ লাখ ৩০ হাজার টাকা অ্যাডভান্স দিয়ে দোকান নিয়েছেন বলে দাবি করেন তিনি। এছাড়া গাড়িও ব্যাংক লোনে কেনা বলে দাবি তার।

পাঠকের মন্তব্য