সান্তোসে আবেগী প্রত্যাবর্তন নেইমারের

অবশেষে ঘরে ফেরা হলো। এক অসাধারন প্রত্যাবর্তনের গল্প লিখে শৈশবের ক্লাব সান্তোসে ফিরলেন নেইমার। তাকে বরণের সময় ক্লাবটির মাঠ ভিলা বেলমিরোর জায়ান্ট স্ক্রিনে লিখা ছিল, ‘রাজপুত্র ফিরে এসেছে।’  ক্লাবটির ইতিহাসের অন্যতম সেরা এই ফুটবলারের ফেরার দিনে সত্যই রাজকীয় আয়োজনের কমতি রাখেনি সান্তোস।  

শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি, ২০২৫) রাতে বিশ হাজারের বেশি সমর্থক উষ্ণ অভ্যর্থনায় নেইমারকে বরণ করে নেন সান্তোসে। এই সময় ফ্লাইড লাইট নিভিয়ে আতশবাজির আলোয় আকাশ আলোকিত করে দেয় ক্লাবটি। পুনর্মিলনটা ৩২ বছর বয়সী ফুটবলারের জন্য ছিল অত্যন্ত আবেগপূর্ণ। টানেল অতিক্রম করে মূল মাঠে প্রবেশের সময় তিনি চোখে জল ধরে রাখতে পারেননি। আপাতত ক্লাবটির সঙ্গে ছয় মাসের চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন নেইমারের, যা ভবিষ্যতে বাড়ানো হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন তিনি।

আবেগের সান্তোস ছেড়েই ২০১৩-১৪ মৌসুমে বার্সেলোনায় পাড়ি দিয়েছিলেন নেইমার। স্পেন ঘুরে রেকর্ড ২২২ মিলিয়ন ইউরোতে ফরাসি ক্লাব পিএসজিতে যোগ দেন এই ব্রাজিলিয়ান উইঙ্গার। এরপর লোভনীয় ১৫০ মিলিয়ন ইউরোর বাৎসরিক বেতনে সৌদি আরবের ক্লাব আল হিলালে যোগ দান করেন। সেখানে চোটের কারণে মাত্র ৭ ম্যাচে মাঠে নামেন ৩২ বছর বয়সী তারকা।

আকাশাচুম্বী বেতনের বিনিময়ে মাত্র ৭ ম্যাচ খেলেছেন, এরপরও নাকি মরুর বুকে অখুশী ছিলেন নেইমার! এই অসন্তষ্টিই তাকে ঘরে ফেরার সিদ্ধান্ত নিতে প্রভাবিত করেছে। নেইমার মস্তিষ্কের আগে হৃদয়কে প্রাধান্য দেওয়ার কথা মনে করিয়ে দিয়ে বলেন, “কিছু সিদ্ধান্ত ‘ফুটবল যুক্তি’র সাথে সম্পর্কিত নয়।”  

সংবাদ সম্মেলনে নেইমার আরও যোগ করেন, “আমি আল হিলালে ট্রেনিং সেশন আর উপভোগ করছিলাম না, এটি আমার মানসিকতার জন্য ঠিক ছিল না। ফিরে আসার সুযোগ পেয়েই আমি একটুও আর দ্বিধা করিনি। প্রথম দিনই আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলাম আমি ফিরতে চাই। আমি আমার বাবকে (এজেন্টও) বলেছিলাম এই ব্যাপারে কাজ করেছে।”

ঘরে ফেরা নিয়ে নেইমার বলেছেন, “আমি খুবই সুখি। এখানে দারুণ সময় কেটেছে। সামনে তেমন সময় আরও আছে।”

উঠে এসেছে ২০২৬ বিশ্বকাপ প্রসঙ্গ।  ব্রাজিলের জার্সিতে এটাই ৩২ বছর বয়সী ব্রাজিলিয়ানের শেষ সুযোগ। সে জন্য দলে ফিরতে হবে আগে। দরকার ছিল নিয়মিত ম্যাচ খেলার। এই ব্যাপারে নেইমার বলেছেন, “আমি জাতীয় দলে ফিরতে চাই। অর্জনের জন্য এখনো একটি (বিশ্বকাপ) মিশন বাকি আছে, যেটা আমার শেষ সুযোগ বলে মনে করি। আমি এটার পেছনে ছুটব।”

সান্তোসের বয়সভিত্তিক দলে বেড়ে ওঠা নেইমার ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ক্লাবটির মূল দলে খেলেছিলেন। এরপর ইউরোপ ভ্রমণ শেষে সাড়ে ১১ বছর পর আবারও সান্তোসে ফিরে আসার মাধ্যমে যেন ক্যারিয়ারের একটি পূর্ণতা পেলেন তিনি। ইউরোপে বেশিরভাগ সময়ই চোটের সাথে লড়াই করেছেন, ফলে নিয়মিত মাঠে নামতে পারেননি। যদিও সান্তোস নিশ্চিত না আগের তেজ আর অবশিষ্ট আছে কিনা নেইমারের। তবুও ক্লাবের সমর্থকেরা তাদের প্রিয় ঘরের ছেলেকে আগের মতোই হৃদয় দিয়ে স্বাগত জানিয়েছেন। একমাত্র পার্থক্য, প্রথম দফায় তিনি ১১ নম্বর জার্সি পরতেন। আর এবার পরবেন ১০ নম্বর, সেই বিখ্যাত নম্বর, যেটি ফুটবলের রাজা পেলে এই ক্লাবে খেলাকালীন পড়তেন!

পাঠকের মন্তব্য