‘আহমদ রফিক ছিলেন সত্যিকারের সমাজবিপ্লবী’
-
- - নিউজ -
- ডেস্ক --
- ২৫ অক্টোবর, ২০২৫
আহমদ রফিক দুইভাবে ভাষাসংগ্রামী ছিলেন বলে মন্তব্য করেছেন অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি বলেন, আহমদ রফিককে কেবল ভাষাসংগ্রামী বললে তার পূর্ণ পরিচয় ধরা যাবে না। তিনি সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী ছিলেন, সমাজবিপ্লবের স্বপ্ন দেখতেন। ব্যক্তি মালিকানার পরিবর্তে সামাজিক মালিকানায় বিশ্বাস করতেন। নিজের ব্যক্তিগত সম্পদও তিনি দান করে গেছেন, যা প্রমাণ করে তিনি ছিলেন সত্যিকারের সমাজবিপ্লবী।
শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) ভাষাসংগ্রামী, কবি ও রবীন্দ্রগবেষক আহমদ রফিকের শোকসভায় এসব কথা বলেন তিনি। বিকেল ৪টায় বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
শোকসভায় বক্তারা বলেন, তিনি যেমন প্রত্যক্ষভাবে ভাষা আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন, তেমনি সাহিত্য ও সংস্কৃতিচর্চার মধ্য দিয়ে বাংলা ভাষাকে সমৃদ্ধ করেছেন। ভাষার জন্য সংগ্রাম করেছেন, আবার ভাষাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্যও সংগ্রাম করেছেন।
শিল্পী অসীম দত্তের কণ্ঠে রবীন্দ্রসংগীতের মাধ্যমে শুরু হয় অনুষ্ঠান। এরপর আহমদ রফিকের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে উপস্থিত সবাই দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন শোকসভা জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। মূল অনুষ্ঠান শুরু হয় তার স্বাগত ভাষণের মধ্য দিয়ে। সঞ্চালনায় ছিলেন কমিটির সদস্যসচিব ইসমাইল সাদী।
আহমদ রফিক ফাউন্ডেশনের সভাপতি কবি মুনীর সিরাজ বলেন, দীর্ঘ জীবনে তিনি অবিরাম লিখেছেন। শুধু রবীন্দ্রনাথকে নিয়েই তার লেখা ২০টি গ্রন্থ ও ১০৫টি প্রবন্ধ। উভয় বাংলায় রবীন্দ্রগবেষণার ক্ষেত্রে তিনিই প্রধান পুরুষ হিসেবে বিবেচিত। তিনি একুশে পদক ও বাংলা একাডেমি পুরস্কারসহ অগণিত সম্মাননা পেয়েছেন।
তিনি জানান, আহমদ রফিকের সব লেখা, পদক ও সম্মাননাসংবলিত দলিল সংরক্ষণের জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ‘ভাষাসংগ্রামী আহমদ রফিক ফাউন্ডেশন’। অনুষ্ঠানে তাকে নিয়ে একটি স্মারকগ্রন্থ প্রকাশের ঘোষণা দেওয়া হয়।
আহমদ রফিকের দীর্ঘদিনের সহকারী আবুল কালাম বলেন, স্যারের সঙ্গে আমি ১৯৮৯ সাল থেকে ছিলাম। জীবনের শেষ দিকে চোখের সমস্যার কারণে লিখতে পারতেন না। এটা নিয়েই তিনি সবচেয়ে বেশি কষ্ট পেতেন।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, রফিক ভাই সমাজতন্ত্রে বিশ্বাস করতেন। ইলা মিত্রের মাধ্যমে আমি প্রথম তার নাম শুনেছিলাম। মুক্তিযুদ্ধের সময় কলকাতায় ইলা মিত্রের বাসায় গেলে তিনি রফিক ভাইয়ের কথা জিজ্ঞাসা করতেন।
বাংলাদেশ জাসদের স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, আহমদ রফিক প্রগতিশীল ও চিন্তাশীল মানুষ ছিলেন। মেডিকেল কলেজে পড়াশোনার সময় তিনি কীভাবে রাজনীতিতে যুক্ত হয়েছিলেন, সেটি নিয়েও গবেষণা হওয়া উচিত।
সভায় আরও বক্তব্য দেন— অধ্যাপক সৈয়দ আজিজুল হক, অধ্যাপক সৈয়দ মোহাম্মদ শাহেদ, বাসদ (মার্ক্সবাদী) সাধারণ সম্পাদক মাসুদ রানা, গণতান্ত্রিক সাংস্কৃতিক ঐক্যের আহ্বায়ক মফিজুর রহমান লাল্টু, বিবর্তন সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সভাপতি এস এম কামাল উদ্দিন, মোশরেফা মিশু, শুভ্রাংশু চক্রবর্তী প্রমুখ।
গত ২ অক্টোবর ৯৬ বছর বয়সে বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আহমদ রফিক। মৃত্যুর আগে তিনি দেহ চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষণার কাজে দান করে গিয়েছিলেন।